হাওরে ধানের বাম্পার ফলন হলেও কাটা সংকটে চিন্তিত কৃষক


sylnews24 প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৭, ২০২৪, ১:৫২ অপরাহ্ন /
হাওরে ধানের বাম্পার ফলন হলেও কাটা সংকটে চিন্তিত কৃষক

হাবিবুর রহমান-হাবিব, শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি : আট কিয়ার (তিন কেয়ারে এক একর) জমিন (জমি) করছি, কয়েকজন মিইল্লা (মিলে) রংপুর থাকি (থেকে) মেশিন (কম্বাইন্ড হারভেস্টার) আনতাম (আনার) চেষ্টা করছিলাম। কালকে রাতেও (সোমবার রাতে) কথা অইছে (হয়েছে) আইজ (মঙ্গলবার) সকাল থেকে আর ফোন ধরছে না (ধরের না) হারভেস্টারের মালিক। ধান পাকিগেছে (পেকেছে), দাওয়ালও (ধান কাটা শ্রমিক বা ভাগালু) পায়রাম না, কোন সুবিধা করতাম পাররাম না, মেশিনের জন্য হন্যে হয়ে ঘুররাম (ঘুরছি), মেশিনও পায়রাম না (পাচ্ছি না)।

সুনামগঞ্জের হাওর বেষ্টিত উপজেলা শাল্লার ভান্ডাবিল  হাওরপাড়ের হবিবপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নিতিশ পুরকায়স্থ মঙ্গলবার দুপুরে ধান কাটার শ্রমিক সংকটের বর্ণনা নিজেরমত করে বলছিলেন এই প্রতিবেদককে।

নিতিশের পাশে দাঁড়ানো হবিবপুর নোয়াগাঁওয়ের প্রসূন কান্তি দাস জানালেন, তিনি এক হাল (চার একর) জমি চাষাবাদ করেছেন। এক কেয়ার জমিও কাটতে পারেন নি। ব্যাপারি (দাওয়াল) পাচ্ছেন না। বড় হারভেস্টার মেশিনের জন্য মঙ্গলবার আনন্দপুর এসেছিলেন। এখানেও মেশিন পান নি।

আনন্দপুরের কৃষক রাধেশ দাস বললেন, ধান কাটানোর কোন উপায় নাই। শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না, কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন কাগজে অনেক আছে বাস্তবে নেই। এই কৃষক বললেন, আগে ফরিদপুর, যশোর , কিশোরগঞ্জ , পাবনা, গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, কুমিল্লা, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটা শ্রমিক আসতো এ উপজেলায়। এখন এসব শ্রমিকরা একেবারেই  আসেনা। সরকার ৭০% ভর্তুকি দিয়ে এলাকার কৃষকের ফসল কাটার জন্য মেশিন দিছে। এই সব মেশিন বেশির ভাগের হদিস নাই। কৃষি অফিসকে এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।

পাশে দাড়ানো কৃষক অলক রায় জানালেন, তিনদিন হয় একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টারের পেছনে পেছনে ঘুরছেন তিনি তার এক আত্মীয়ের জমির ফসল কাটার  জন্য । কিন্তু মেশিনটি নিতে পারছেন না। বললেন,‘আতংকের মধ্যে আছি, আকাশের দিকে তাকাচ্ছি, আবহাওয়া খারাপ করলে বিপদ হবে।’

শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান  আব্দুস ছাত্তার বললেন, আমি ৯০ কেয়ার (৩০ একর) জমি চাষাবাদ করেছি। এখন ধান কাটানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। উপজেলা কৃষি অফিস কম্বাইন্ড হারভেস্টার আরও বরাদ্দ দেবার জন্য উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষকে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু মেশিন পাওয়া যায় নি। আবহাওয়া খারাপ করলে মানুষ বিপদে পড়বে বলে মন্তব্য করেন এই জনপ্রতিনিধি।

নওয়াগাঁও গ্রামের মাখন লাল দাস  তিনি  জানালেন, আশেপাশের পাঁচটি বড় গ্রাম নিয়ামতপুর, আনন্দপুর, চরগাঁও, নোয়াগাঁও আঙ্গারুয়া ও সুখলাইনসহ কম পক্ষে ৭/৮ টি  বড় কম্বাইন্ড হারভেস্টার দরকার ।  কৃষি অফিস সূত্রে জানতে পারলাম আনন্দপুর গ্রামে ৫ টি বড় মেশিন দিয়েছে সরকার।  কিন্তু২ টি বড় মেশিন ব্যতিত অন্য  মেশিনগুলো এখন পাওয়া যাচ্ছে না। যে ২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার আছে, সেটি দিয়ে কে আগে, কে পরে ধান কাটাবে. রীতিমত ঝগড়াঝাটি লেগে যাচ্ছে।  স্থানীয় শ্রমিকরা গ্রুপ করে কিছু কিছু ধান কাটছে। আবহাওয়া খারাপ হলে মানুষ মহা বিপদে পড়বে।

একজন কৃষি ব্লক সুপার ভাইজার বললেন, তার ব্লকে পাঁচটি হারভেস্টার কাগজেপত্রে রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তিনটিই নষ্ট। একটি কাজ করলেও এই মেশিন দিয়ে ধান কাটা যাচ্ছে না। তবে অন্য জেলা থেকে কম্বাইন্ড হারভেস্টার আসতে শুরু হয়েছে বলে দাবি করলেন তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ তুষার জানালেন, সত্যি বিষয় হলো কাগজ পত্রে শাল্লায় ৪৯ টি বড় হারভেস্টার মেশিন রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন চিত্র। কয়েকটি মেশিন বিকল আছে বলে কৃষক জানান। তবে এলাকার বহু কৃষক বলছেন কিছু কিছু মেশিন মালিক অধিক মূল্য উপজেলার বাহিরে এসব মেশিন  বিক্রি করে দিয়েছেন । ফলে ধান কাটা নিয়ে কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পরেছেন। এমন হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে বাহিরের জেলা থেকে মেশিন আসতেছে বলে তিনি জানান।

 

Sent from my Galaxy