জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি- সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর(সওজের) বাস্তবায়নে নির্মিত জগন্নাথপুরে- রানীগঞ্জ -ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের জগন্নাথপুর উপজেলার ইছগাঁও এলাকায় কাটাগাঁঙের বেইলী সেতু ভেঙে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক নদীতে ডুবে চালক ও হেলপার নিহতের ঘটনায় দুজনের মরদেহ বুধবার বিকেল তিনটায় পুলিশ নিহতদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন লালন, এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের প্রকৌশলী গণ দূর্ঘটনাস্হল পরিদর্শন করেছেন।
এ দিকে গতকাল বুধবার অধিক ওজনের মাল বহন করায় সেতু ভেঙে সরকারের ৩ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের মামলা করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। অন্যদিকে, ঘটনার পর বিপদ জনক বেইলী সেতুর দু-পাড়ে মঙ্গলবার রাতে সওজ কর্তৃক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির একটি সাইনবোর্ড সাটানো হয়েছে। দূর্ঘটনার পর সওজের দায় এড়াতে রাতের অন্ধকারে সতর্কিকরণ সাইনবোর্ড সাটানোর ঘটনায় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এধরনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আগে থেকেই সেতুর উভয় পাশে ক্ষতিগ্রস্ত এ সেতু দিয়ে ১০ টনের অধিক ওজনের যানবাহন চলাচল নিষেধের বোর্ড স্থাপন রয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। গত মঙ্গলবার (২২আগষ্ট) দুর্ঘটনা পর রাতেই সুনামগঞ্জ সওজের পাগলা ও ছাতক সড়ক উপ-বিভাগের উপ সহকারি প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় সড়ক পরিবহণ আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ঢাকা মেট্রো ট ২৪-৪৩৭১ নম্বরের ট্রাকটির অজ্ঞাতনামা মালিক ও চালককে আসামী করা হয়েছে। এদিকে, স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা ঘটনার জন্য সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করেছেন। তবে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ বলছে, নিষেধ অমান্য করে অধিক ওজনের সিমেন্ট রোঝাই ট্রাকটি ক্ষতিগ্রস্ত এ সেতু পাড় হতে গিয়ে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। মঙ্গলবার বিকেলে সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সড়ক দিয়ে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে জগন্নাথপুর উপজেলা সহ পুরো জেলা বাসী চরম দুর্ভোগ পড়েছেন। উপজেলা পরিবহন শ্রমিক নেতা গোলাম রব্বানী বলেন, গত বছরের নভেম্বর মাসে রানীগঞ্জ সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ঢাকা আঞ্চলিক এ মহাসড়কে সবধরণের যানবাহনের চাপ দেখা দেয়। এরপর থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ এ বেইলি সেতুর পাটাতন একাধিক খুলে পড়লে জোড়াতালি দিয়ে চালু রাখা হয়। দুর্ঘটনার শঙ্কা আগেই ছিল। কিন্তুু সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি এ শ্রমিক নেতার। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, ওখানে আগে থেকেই ১০ টনের বেশি ওজনের যানবাহন উঠতে নিষেধ করে সাইনবোর্ড লাগানো ছিল। একপাশের সাইনবোর্ড চুরি হয়ে যাওয়ায় মঙ্গলবার রাতে আবার লাগানো হয়েছে। তিনি বলেন, অধিক ওজনের ট্রাকটি বেইলী সেতুতে উঠায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আমরা জগন্নাথপুর থানায় ক্ষতিপূরণের মামলা করেছি। জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের লোকজনের কোন অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়া গতকাল বুধবার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রসঙ্গতঃ মঙ্গলবার (২২ আগষ্ট) বিকেলে পৌনে চারটায় ঢসকার নারায়ণগঞ্জ থেকে সাড়ে ৪শ বস্তা সিমেন্ট নিয়ে একটি ট্রাক জগন্নাথপুর উপজেলা সদর বাজারে আসার সময় জগন্নাথপুর- আউশকান্দি ভায়া ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের ইছগাঁও এলাকার কাটানদীর বেইলি সেতু পাড় হতে গিয়ে সেতুর উত্তর অংশের অ্যাপ্রোচে অতিরিক্ত স্টিল দিয়ে তৈরি করা সেতু ভেঙে ট্রাকটি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। পরে দুই ঘন্টাব্যাপি উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল ডুবন্ত ট্রাকটির ভিতর থেকে চালক ফারুক মিয়া ও তার সহযোগি জাকির আহমদের মরদেহ উদ্ধার করে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ট্রাকটি উদ্ধার হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :